ডিজিটাল মার্কেটিং এর গুরুত্ব

ডিজিটাল মার্কেটিং এর গুরুত্ব (১১ টি কারণ)

ডিজিটাল মার্কেটিং এর গুরুত্ব বলতে গেলে একটু পেছনে ফিরে যাওয়া যাক। আপনি পাঁচ বছর আগের কথায় চিন্তা করুন, বর্তমানে ফেসবুককেন্দ্রিক বা ইউটিউবকে টার্গেট করে যে পরিমাণ বিজনেস দাঁড়িয়ে গেছে, সেটা গত পাঁচ বছর আগে চিন্তাও করা সম্ভব ছিল না। 

আপনার চোখের সামনেই হয়তোবা দেখছেন আপনার কোন বড় ভাই, বড় বোন, বন্ধু বা পরিচিত কেউ শুধুমাত্র একটা ফেসবুক পেজ খুলে একটা ছোট উদ্যোগ শুরু করে, সেই অবস্থা থেকে তার বিজনেসকে আজকে একটা বেশ ভালো অবস্থানে নিয়ে আসতে পেরেছে- এটা কিভাবে সম্ভব হয়েছে? 

বুঝতেই পারছেন ডিজিটাল মার্কেটিং। 

ডিজিটাল মার্কেটিং বর্তমানে শুধুমাত্র একটি বাজওয়ার্ড বা হাইপ নয়, এর চেয়ে আরো অনেক বড় কিছু। 

এই ডিজিটাল মার্কেটিং গত পাঁচ বছরে দেশ বিদেশে লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিয়েছে। 

ডিজিটাল মার্কেটিং তৈরি করেছে বাংলাদেশ সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইন্টারনেট ভিত্তিক অসংখ্য উদ্যোগ।

আজকের লেখায় আমি তুলে ধরব ডিজিটাল মার্কেটিং এর গুরুত্ব এবং বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে ডিজিটাল মার্কেটিং কতটুকু প্রয়োজন। 

ডিজিটাল মার্কেটিং এর গুরুত্ব? কেন ডিজিটাল মার্কেটিং প্রয়োজন?

ডিজিটাল মার্কেটিং এর গুরুত্বকে আমরা দুইভাবে বিবেচনা করতে পারি। প্রথমত ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের সুবিধা এবং ক্যারিয়ারের ক্ষেত্রে ডিজিটাল মার্কেটিং এর প্রয়োজনীয়তা। 

ব্যবসা বাণিজ্যে ডিজিটাল মার্কেটিং এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা

ব্যবসার ক্ষেত্রে ডিজিটাল মার্কেটিং এর প্রয়োজনীয়তা খুব সংক্ষেপে জানতে নিচের পয়েন্টগুলো লক্ষ্য করুন- 

  • বাজেট ফ্রেন্ডলি- সবার জন্য ডিজিটাল মার্কেটিং।
  • বড় অডিয়েন্স- স্কাই ইস দ্যা লিমিট, সীমানা ততটুকু যতটুকু চাহিদা
  • ফোকাস অডিয়েন্স- ভুল কারো কাছে মার্কেটং হবে না
  • সাশ্রয়ী- কম খরচে অনেক বেশি লাভ
  • সহজ- সহজেই ম্যানেজ করা যায়
  • রিয়েল টাইম ক্যাম্পেইন- প্রতিটি মুহূর্তের ক্যাম্পেইন ডাটা ট্র্যাক করা যায়
  • ডাটা ড্রিভেন মার্কেটিং- ডাটা নির্ভর মার্কেটিং প্ল্যান ও সিদ্ধান্ত
  • ওয়ান টু ওয়ান কানেকশন – ব্র্যান্ডের সাথে কনজুমারদের ডিরেক্ট কানেকশন
  • সহজে পরিমাপযোগ্য- মার্কেটিং ক্যাম্পেইন কেমন পারফর্ম করছে তা খুব সহজে বোঝা যায় 
  • হাই কনভার্শন রেট- ডিজিটাল মার্কেটিং এ কনভার্সন ট্র্যাডিশনাল মার্কেটিং এর  চেয়ে অনেক হাই
  • সহজ ব্রান্ডিং- যে কোন প্রতিষ্ঠানের পক্ষেই সম্ভব ছোট প্রতিষ্ঠানকে একটা ব্র্যান্ড হিসেবে দাঁড় করানো 

১. বাজেট ফ্রেন্ডলি মার্কেটিংঃ সবার জন্য ডিজিটাল মার্কেটিং

মার্কেটিং যে কোন প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি খরচসাপেক্ষ ব্যাপার। 

সব প্রতিষ্ঠান আসলে মার্কেটিং করেও না, কিন্তু ছোট ছোট এই প্রতিষ্ঠানগুলো প্রপার মার্কেটিং না করার কারণে কখনো ছোট থেকে একটা প্রতিষ্ঠানকে বড় অবস্থায় নিয়ে যেতে পারে না। 

ফলে মার্কেটিংটা হয়ে গেছে সব বড় প্রতিষ্ঠানের ব্যাপার স্যাপার। 

আপনি টিভিতে বিজ্ঞাপন দিবেন? রেডিওতে বিজ্ঞাপন দিবেন? সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দিবেন? বিলবোর্ডে বিজ্ঞাপন দিবেন? 

আপনি বিজ্ঞাপন দিবেন এই নাম নিলেই অন্তত আপনাকে ১০ লাখ টাকার বাজেট নিয়ে নামতে হবে। আর ১০ লাখ টাকা অনেকসময় ছোট প্রতিষ্ঠাগুলোর পুঁজিও নেই। 

তাই ট্র্যাডিশনাল মার্কেটিংটা হয়ে উঠেছিল শুধুমাত্র বড় প্রতিষ্ঠানগুলো হাতিয়ার! ফলে বড় প্রতিষ্ঠান দিনে দিনে আরও বড় হত আর ছোট প্রতিষ্ঠান কখনো বড় হতে পারত না। 

এই সাইকেল থেকে ভেঙ্গে ছোট বা মাঝারি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ডিজিটাল মার্কেটিং হয়ে উঠেছে নেক্সট মুভ! 

মানে এখন ছোট ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানগুলো খুব সহজেই অল্প বাজেট নিয়ে মার্কেটিং করতে পারছে এবং দিনে দিনে বড় হওয়ার সুযোগ বাড়ছে। 

ডিজিটাল মার্কেটিং এর সবচেয়ে সুবিধা হচ্ছে- আপনি এমনকি ১০০০ টাকা দিয়েও আপনি মার্কেটিং নিয়ে ভাবতে পারেন। এতোটাই সাধ্যের মধ্যে। এতোটাই সম্ভাবনা। 

আর যেকারণে আজকে আমরা দেখছি হাজার হাজার ডিজিটাল উদ্যোক্তা। আপনি মাত্র ৫০০০ টাকা নিয়েও আজকাল ব্যবসা শুরু করে দিতে পারেন- যা ডিজিটাল মার্কেটিং এর কল্যানেই সম্ভব হয়েছে।

২. বড় অডিয়েন্সঃ স্কাই ইস দ্যা লিমিট, সীমানা ততটুকু চাহিদা যতটুকু

একটা ট্রেডিশনাল মার্কেটিংয়ে একটা ছোট প্রতিষ্ঠান সর্বোচ্চ কতটুকু পর্যন্ত এরিয়াকে টার্গেট করে বিজনেস করতে পারে? 

হয়তো পাড়া, হয়তো মহল্লা, নয়তো থানা, এর বেশি কি সম্ভব ছিল? 

ডিজিটাল মার্কেটিং আপনাকে সাধারণত যতোটুকু পর্যন্ত টার্গেট অডিয়েন্স রিচ করতে পারতেন তার চেয়ে অনেক বেশি অডিয়েন্স এর কাছে রিচ করার সুযোগ করে দেয়, সারা পৃথিবী আপনার টার্গেট মার্কেট- যেটা ট্রেডিশনাল মার্কেটিং এ কখনো সম্ভব হয় না। 

আপনি বাংলাদেশে বসে ইউএস মার্কেটে বিজনেস করছেন ব্যাপারটা কি ভাবা যায়?  

হ্যাঁ, যেটা কল্পনা করা সম্ভব ছিল না, সেটাই এখন বাস্তব এবং সেটা ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের মাধ্যমেই সম্ভব হয়েছে।  

বাংলাদেশের এমন অসংখ্য স্টার্টআপ আছে যারা প্রতিনিয়ত হাজার হাজার ডলার ইনকাম করছে ইউএস মার্কেটে তাদের প্রোডাক্ট বা সার্ভিস বিক্রি করে।  

শুধু তাই নয় এমনকি বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের ছোট ছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো এখন সারা বাংলাদেশব্যাপী ডিজিটাল মার্কেটিং এর মাধ্যমে ব্যবসা করার সুযোগ পাচ্ছে। ব্যবসা এখন আর কোন আঞ্চলিক সীমার মধ্যে নেই, হয়ে উঠেছে গ্লোবাল। 

আপনি কোথায় থাকেন, আপনার বয়স কত, আপনার ব্যবসা কত বড়- এর কোনটাই মুখ্য না। 

আপনি যদি ক্রিয়েটিভ হতে পারেন, ডিজিটাল মার্কেটিং এর টেকনিক্যাল নলেজ যদি আপনার থাকে, তাহলে আপনার পক্ষে সম্ভব বাংলাদেশের প্রত্যন্ত একটা অঞ্চলে থেকে সারা বাংলাদেশব্যাপী আপনার ব্যবসাকে  ছড়িয়ে দিতে।  

এজন্যই বলছি স্কাই ইজ দ্য লিমিট। 

আপনি যতটুকু ভাবতে পারবেন ততটুকুই ডিজিটাল মার্কেটিং এ করা সম্ভব। 

৩. ফোকাস অডিয়েন্সঃ অন্ধকারে ঢীল ছুড়বো না

ট্র্যাডিশনাল মার্কেটিং এ প্রচুর পরিমাণে অন্ধাকারে ঢীল ছোড়া হয়। যারা আমার কাস্টমার হওয়ার বিন্দুমাত্র সম্ভাবনা নাই, এটা জেনেও তাদের কাছে আমার বিজ্ঞাপন যাচ্ছে। মানে অন্ধকারে ঢীল ছুড়ছি।  

এই যে ভুল মানুষের কাছে আপনি মার্কেটিং করছেন এতে আপনার সময় যেমন যাচ্ছে টাকা নষ্ট হচ্ছে শ্রম এবং কষ্ট বেড়ে যাচ্ছে। 

ব্যাপারটা একটু ব্যাখ্যা করা যাক-  

আপনি টেলিভিশন অথবা রেডিও অথবা সংবাদপত্রে আপনার একটা চুলের তেলের বিজ্ঞাপন দিলেন। এবার একটু ভেবে দেখেন আপনার বিজ্ঞাপনটা যখন রেডিও বা টেলিভিশনে চলছে, ঠিক সেই মুহূর্তে কতজন মানুষ আপনার বিজ্ঞাপনটি দেখছে যারা আপনার এই চুলের তেলের ব্যবহারকারী হতে পারে? 

এমন অসংখ্য মানুষ আছে যারা ছেলে বা পুরুষ এই মুহূর্তে রেডিও বা টিভি দেখছে তারা কখনো আপনার এই চুলের তেল কিনবে না। 

এমনকি মহিলাদের মধ্যে যারা এই বিজ্ঞাপন দেখছে তাদের মধ্যে অনেকেই হয়তবা আপার ক্লাসের মানুষ, তারা এই তেল কিনবে না, অনেকে আবার নারিকেল তেলই ব্যবহার করে না ইত্যাদি এমন প্রচুর মানুষের কাছে আপনার বিজ্ঞাপনটা যাচ্ছে যারা এর ব্যবহারকারী হওয়ার কোন সম্ভাবনা নাই। 

এই বিষয়টা জানা স্বত্বেও আপনি মার্কেটিং করে যাচ্ছেন। কারণ এখানে অডিয়েন্সকে স্পেসিফিক করে মার্কেটিং করার সুযোগ খুব কম। 

এর ফলে আপনার প্রচুর টাকা প্রতিদিন নষ্ট হচ্ছে, ভুল মানুষের পেছনে। আপনার সময় নষ্ট হচ্ছে, কষ্ট বাড়ছে।  

আপনার প্রোডাক্ট বা সার্ভিস যেই মানুষগুলোর কেনার সম্ভাবনা আছে শুধুমাত্র তাদেরকে লক্ষ্য করে মার্কেটিং ক্যাম্পেইন পরিচালনা করা যায় ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে। 

এতে করে ভুল মানুষের কাছে আপনাকে মার্কেটিং করে অযথা টাকা নষ্ট করতে হচ্ছে না এবং আপনি অল্প টাকায় অনেক বেশি মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারছেন এবং এর ফলে আপনি অল্প পুঁজি নিয়ে আপনার ব্যবসাকে অনেক দূর পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন।

৪. সাশ্রয়ী- কম খরচে অনেক বেশি লাভ  

ডিজিটাল মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে এই কথাটি বুঝে সবচেয়ে সত্যি- দামে কম, মানে ভাল। 

মানে আপনি ট্র্যাডিশনাল যে কোন মার্কেটিং এর চেয়ে বহুগুন কম খরচে ডিজিটাল মার্কেটিং করতে পারেন এবং সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে বহুগুন কম খরচ করেও আপনি বহুগুন বেশি রেজাল্ট পাবেন।

এটা শুনতে যেমন অবিশ্বাস্য, তেমননি মানতেও। কিন্তু এটাই সত্যি। 

আপনি নিচের এই ছবিটা দেখুন, আপনার ধারণা ক্লিয়ার হয়ে যাবে।  

৫. সহজ- সহজেই ম্যানেজ করা যায়

অন্য যে কোন মাধ্যমের চেয়ে মার্কেটিং প্রসেস ডিজিটাল মার্কেটিং এ অনেক সহজ ও সাবলীল। খুব বেশি কমপ্লিকেশন এখানে নাই। 

আপনি যদি মোটামুটি একজন টেকসেভি মানুষ হয়ে থাকেন- অর্থাৎ- কম্পিউটারের ব্যবহার জানেন, ইন্টারনেটের ব্যবহার জানেন এবং সেই সাথে যদি আপনার কমিউনিকেশন স্কিল ভাল থাকে, তাহলে আপনার পক্ষে ডিজিটাল মার্কেটিং শেখা যেমন সহজ তেমনিভাবে ডিজিটাল মার্কেটিং এর কাজ করাটাও অনেক সহজ হয়ে যাবে। 

ডিজিটাল মার্কেটিং এতোই সিম্পল। তবে খুব ভাল মাপের একজন ডিজিটাল মার্কেটার হতে হলে দরকার- এনালাইটিকাল এবিলিটি, ক্রিয়েটিভিটি এবং সেন্স অফ মার্কেটিং। 

৬. রিয়েল টাইম ক্যাম্পেইন- প্রতিটি মুহূর্তের ডাটা ট্রাকিং

একটা ক্যাম্পেইন শুরু করার পর ট্র্যাডিশনাল ওয়েতে- অল্প সময়ে বোঝার কোন উপায় থাকে না যে মার্কেটিং ক্যাম্পেইনটি কেমন হচ্ছে। কেমন পারফর্ম করছে। সেটা বুঝতে বুঝতে এতো সময় পার হয়ে যায় যে তখন আর নতুন করে কোন কিছু করার থাকে না। 

ডিজিটাল মার্কেটিং এই সমস্যার সবচেয়ে ভাল সমাধান। 

এখানে প্রতি সেকেন্ডে বা মিনিটে কি হচ্ছে না হচ্ছে সব কিছু সাথে সাথে মনিটর করা যায় এবং সেই অনুয়ায়ি একশন নেওয়া যায়। 

যেকোন সময় যে কোন সিদ্ধান্ত নেওয়ার এই ক্ষমতাকে অনন্য করেছে ডিজিটাল মার্কেটিং।

৭. ডাটা ড্রিভেন মার্কেটিং- ডাটা নির্ভর মার্কেটিং প্ল্যান ও সিদ্ধান্ত

ডাটা ড্রিভেন মার্কেটিং কি? ডাটা নির্ভর মার্কেটিংকে বলে ডাটা ড্রিভেন মার্কেটিং। অর্থাৎ আপনি আপনার মার্কেটিং এর প্রতিটি সিদ্ধান্ত নেবেন পর্যাপ্ত ডাটার উপর নির্ভর করে। ফলে আপনার সিদ্ধান্ত নেওয়ার ফলাফলটা হবে একুরেট। 

ভুল পথে যাওয়ার সম্ভাবনাটা একেবারেই থাকবে না। 

ডিজিটাল মার্কেটিং এ যেহেতু খুব সহজে ডাটা ট্রাকিং করা যায় মার্কেটিং এর প্রতিটি স্টেপকে, প্রতিটি দিন বা সময়কে, সেক্ষেত্রে ডাটা ড্রিভেন প্রোসেসটা হয়ে যায় যে কারো জন্য সহজ ও কার্যকরী। 

মার্কেটিং প্ল্যান ও এক্সিকিউশন প্রাপ্ত ডাটা থেকে নেওয়া যায় সিদ্ধান্ত। 

৮. ওয়ান টু ওয়ান কানেকশন – ব্র্যান্ডের সাথে কনজুমারদের ডিরেক্ট কানেকশন

ডিজিটাল মার্কেটিং হচ্ছে বাইডিরেকশনাল কমিউনিকেশন। বাই ডিরেকশনাল মানে আপনার ব্র্যান্ডের সাথে যে কোন কনজুমার চাইলেই কানেক্ট হতে পারছে, কমুনিকেট করতে পারছে, ফিডব্যাক দিতে পারছে। 

একইভাবে আপনিও ডিরেক্ট কনজুমারের মনের মধ্যে কি চলছে, তারা কি চাইছে তা বুঝতে পারছেন। 

ফলে একটা প্রতিষ্ঠানকে আর সাধারণ মানুষজনের কাছে দুরের কিছু মনে হয় না বরং মনে হয় তার খুব কাছের, তার সমস্যা সমাধান করার জন্য এই প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। 

কিন্তু অন্য সব মার্কেটিং মনোডিরেকশনাল- মানে একটা প্রতিষ্ঠান শুধু কনটেন্ট প্রচার করে যাবে, ইচ্ছাকৃত হোক বা অনিচ্ছাকৃত হোক অডিয়েন্সকে সেটা দেখতে হবে বা কনজিউম করতে হবে। তারা তাদের সমস্যা, তাদের কথা কখনো ঐ প্রতিষ্ঠানকে বলতে পারে না। 

৯. সহজে পারফর্মেন্স পরিমাপযোগ্য- মার্কেটিং ক্যাম্পেইন কেমন পারফর্ম করছে তা খুব সহজে বোঝা যায় 

ডিজিটাল মার্কেটিং এ পারফর্মেন্স ইনডিকেটরগুলো খুবই সহজ। যে কেউ খুব সহজে বুঝতে পারে, মার্কেটিং ক্যাম্পেইন কেমন হচ্ছে। কতটা ভাল হচ্ছে বা কতটা খারাপ হচ্ছে। খারাপ হলে কোথায় কোথায় খারাপ হচ্ছে, কোথায় আরও ইম্প্রুভ করা যাবে। 

এর এই ব্যাপারগুলো ট্র্যাডিশনাল মার্কেটিং এ কখনোই এতোটা সহজ ও বোধগম্য নয়। 

১০. হাই কনভার্শন রেট- ডিজিটাল মার্কেটিং এ কনভার্সন ট্র্যাডিশনাল মার্কেটিং এর  চেয়ে অনেক হাই

ডিজিটাল মার্কেটিং এ আপনি নিজের মতো করে অনেক কিছু কাস্টমাইজ করার সুযোগ পাবেন। যেকোন সময় প্রয়োজনে আবার কারেকশন করতে পারবেন। প্রয়োজন অনুয়ায়ি অ্যাকশন নিয়ে কনভার্শন বাড়ানোকে বলে কনভার্শন রেট অপটিমাইজেশন (CRO)।

আর এই সব কারণে ডিজিটাল মার্কেটিং এর কনভার্শন রেট অন্য যে কোন মার্কেটিং সিস্টেমের চেয়ে অনেক বেশি।

১১. সহজ ব্রান্ডিং- যে কোন প্রতিষ্ঠানের পক্ষেই সম্ভব ছোট প্রতিষ্ঠানকে একটা ব্র্যান্ড হিসেবে দাঁড় করানো

যেহেতু ডিজিটাল মার্কেটিং শুরু করার জন্য খুব বেশি বাজেটের প্রয়োজন হয় না, তাই যে কেউ অনায়াসে ব্রান্ডিং শুরু করতে পারে। 

সেটা বিসনেসের জন্য ব্রান্ডিং হোক বা নিজের ক্যারিয়ারের জন্য পারসোনাল ব্রান্ডিং হোক। 

কোন একটা প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি খুব সহজে নিজেকে একটা ব্র্যান্ড হিসেবে দাঁড় করানোর জন্য দরকার প্রচুর পরিমাণে ইনফরমেন্টিভ কনটেন্ট তৈরি করা। আপনার টার্গেট অডিয়েন্স তাদের জীবনে আপনার প্রোডাক্ট বা সার্ভিস সম্পর্কিত যে যে সমস্যাগুলো প্রতিনিয়ত ফেস করছে সেই সমস্যাগুলোকে চিহ্নিত করে, কনটেন্টের মাধ্যমে সেগুলোর সমাধান দেওয়া এবং এই কন্টেনগুলকে ক্রস চ্যানেলগুলতে ছড়িয়ে দেওয়া। 

যখন অডিয়েন্স এই ধরণের সমস্যা নিয়ে ইন্টারনেটে সমাধান খুঁজবে তখন যেন সবচেয়ে বেশি তার সামনে আসে আপনার কনটেন্ট। এতে যে সুবিধাটা হবে- 

আপনার ব্র্যান্ড তার কাছে একটা সুপারম্যান টাইপের ব্র্যান্ডে পরিনত হবে। আপনার ব্র্যান্ডের প্রতি তার আস্থা বেড়ে যাবে। এই ধরণের মার্কেটিংকে বলে ইনবাউন্ড মার্কেটিং। আপনাকে খুঁজে নিবে আপনার অডিয়েন্স। 

এভাবে খুব অল্প সময়ে অল্প রিসোর্স ব্যবহার করেই সম্ভব সহজে একটি প্রতিষ্ঠানকে ব্র্যান্ড হিসেবে দাঁড় করানো।    

ক্যারিয়ার হিসেবে ডিজিটাল মার্কেটিং কেমন? ডিজিটাল মার্কেটিং ক্যারিয়ারের গুরুত্ব

বিসনেসের ক্ষেত্রে ডিজিটাল মার্কেটিং এর ভূমিকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা ইতোমধ্যে বুঝে গেছেন আশা করি। 

১. গ্রইং ইন্ডাস্ট্রি

খুব বেশিদিন হয়নি ডিজিটাল মার্কেটিং ইন্ডাস্ট্রির বয়স। উন্নত দেশগুলোতে ইতোমধ্যে ডিজিটাল মার্কেটিং এর পূর্ণ সুবিধা নিচ্ছে। 

আমাদের মতো দেশগুলোতে যেটা হয়- ফার্স্ট ওয়াল্ড কান্ট্রিগুলোতে কোন একটা নতুন কিছু এসে তার প্রভাব বাংলাদেশের মতো দেশগুলো আসতে কিছুটা সময় লাগে। 

অন্তত ৫ থেকে ৭ বছরের মতো লেগে যায় বাংলাদেশে আসতে আসতে। 

সেই হিসেবে পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান তাদের বছরের মার্কেটিং বাজেটের প্রায় ৮০ ভাগ বর্তমানে ব্যবহার করে ডিজিটাল মাধ্যমগুলোতে আর ২০ ভাগ এখনো ট্র্যাডিশনাল মার্কেটিং এ। 

কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা এখনো উল্টো। কিন্তু গত কয়েক বছরে- যে হারে ডিজিটাল মার্কেটিং বাংলাদেশে প্রসার ঘটছে, তাতে উন্নত দেশগুলোর মতো অবস্থানে যেতে খুব বেশি সময় লাগবে না।

বর্তমানে দেশের সচেতন প্রায় প্রতিটি প্রতিষ্ঠান তাদের নিজেদের মতো করে ডিজিটাল উইং খুলছে। ইন হাউজ টিম দিয়ে পরিচালনা করছে ডিজিটাল মার্কেটিং। 

এই গ্রইং ইন্ডাস্ট্রির জন্য দরকার প্রচুর সংখ্যক ডিজিটাল মার্কেটিং এক্সপার্ট। যে সুযোগটা অপেক্ষা করছে আপনার জন্যই।  

২. ক্যারিয়ারে প্রতিদ্বন্দ্বিতা কম

আপনারা ইতোমধ্যে জেনে গেছেন, বাংলাদেশ ও বিশ্বে প্রচুর পরিমাণ ডিজিটাল মার্কেটারের চাহিদা রয়েছে। কিন্তু সেই তুলনায় বাংলাদেশে বিশেষ করে কর্পোরেট সেক্টরে ভাল মানের ডিজিটাল মার্কেটার খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছে না। 

এর অর্থ হচ্ছে, আপনি যদি আগামী কয়েক মাসে নিজের উন্নতি করে ডিজিটাল মার্কেটিং স্কিলগুলো খুব ভাল করে ডেভেলপ করতে পারেন, তাহলে একজন প্রফেশনাল ডিজিটাল মার্কেটার হিসেবে বাংলাদেশের কোর্পোরেট সেক্টরে আপনার জন্য চাকরির অভাব হবে না। 

এবার আসি ফ্রিল্যাসিং এর ক্ষেত্রে ডিজিটাল মার্কেটিং অন্যতম একটি চাহিদাসম্পন্ন পেশা। যেটা আগে ব্বলেছি প্রফেশনাল ভাল মানের ডিজিটাল মার্কেটারের এখনো অনেক অভাব বাংলাদেশে। 

আপনি যদি শুরু বেসিক ডিজিটাল মার্কেটিং জানেন, তাহলে এটা দিয়ে খুব বেশি কিছু করা সম্ভব না। আপনাকে অ্যাডভান্সড ডিজিটাল মার্কেটিং জানতে হবে। তাহলে যেকোন ডিজিটাল মার্কেটিং প্রতিযোগিতা উৎরে যেতে পারবেন সহজে। 

৩. ডাইন্যামিক

ডিজিটাল মার্কেটিং পেশা হিসেবে প্রচণ্ড ডাইন্যামিক। অন্য সব স্কিলের মতো এখানে পার্টিকুলার একটা কোর স্কিল না, অনেকগুলো ভাল ভাল স্কিলের সংমিশ্রণ হচ্ছে ডিজিটাল মার্কেটিং। যে কারণে ডিজিটাল মার্কেটিং এর ব্যাপকতাও অনেক বেশি। 

ডিজিটাল মার্কেটিং একটি ডাইন্যামিক স্কিল হওয়ার কারণে, আপনার হাতে শুধু এক ধরণের সুযোগই না, বরং আপনার হাতে অপশন অনেক। আপনি চাইলে যে কোন একদিকে মুভ করতে পারেন আপনার পছন্দ অনুয়ায়ি।  

  • আপনি চাইলে একজন ডিজিটাল মার্কেটিং ফ্রিল্যান্সার হতে পারেন। 
  • চাইলে একজন ফুল টাইম ডিজিটাল মার্কেটার হিসেবে চাকরি করতে পারেন। 
  • নিজের মতো করে অনলাইন ব্যবসা শুরু করতে পারেন। 
  • চাইলে ব্লগিং করে প্যাসিভ ইনকামে ফোকাস করতে পারেন।
  • ডিজিটাল মার্কেটিং ক্যারিয়ার কোচ হতে পারেন 

৪. হায়েস্ট পেইং

বর্তমানে পৃথিবীতে হায়েস্ট পেইং জব সেক্টরগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ডিজিটাল মার্কেটিং। 

এই ছবিটি দেখুন। 

একজন ডিজিটাল মার্কেটার গড়ে……. থেকে …….ইনকাম করে প্রতি মাসে। সুতরাং বুঝতেই পারছেন ডিজিটাল মার্কেটারদের বেতন কেমন হয়। 

৫. কমফোর্টেবল

ডিজিটাল মার্কেটিং হচ্ছে প্রচণ্ড কম্ফোর্টেবল একটু জব। আপনি যেখানে খুশি সেখানে যেতে পারেন, যখন খুশি যেতে পারেন, কিন্তু আপনার মার্কেটিং চলবে। সব জায়গায়, সবখানে। 

একজনের উপর আরেকজনের ডিপেন্ডেসি এখানে অনেক কম। সবেচেয়ে বড় ব্যাপার আপনি এখানে অনেক কিছু অটোমেশন করে করতে পারবেন, যেখানে আপনি একবার একটা সিস্টেম তৈরি করে দিয়েছেন। সেই সিস্টেম নিজের মতো করে চলতে থাকবে। আপনার কাজ হচ্ছে মনিটরিং করা। সবকিছু ঠিকঠাক মতো হচ্ছে কিনা। যদি প্রয়োজন হয়, কারেকশন করা।

ডিজিটাল মার্কেটিং এর সুবিধাগুলো কি কি পড়ুন। 

শেষ কথা

বেশ বড়সড় একটা লেখা হয়ে গেল। এতোটা বড় করে লিখবো ভাবি নাই। তাও যদি এই লেখাটি আপনাদের উপকারে আসে- তাহলেই আমি সার্থক। আশা করি এই লেখায় আমি ডিজিটাল মার্কেটিং কি এবং কেন প্রয়োজন, ডিজিটাল মার্কেটিং এর গুরুত্ব কি তা সঠিকভাবে আপনাদের সামনে উপস্থাপন করতে পেরেছি। 

আসলে ডিজিটাল মার্কেটিং এর গুরুত্ব বলে শেষ করা যাবে না, এর জন্য আপনাকে এই বিষয়টাতে ডুব দিতে হবে।

আমি এই ব্লগে নিয়মিত ডিজিটাল মার্কেটিং, এসইও, অনলাইন বিসনেস, ক্যারিয়ার ও প্রোডাক্টিভিটি ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ে নিয়মিত লিখি। লেখাটি ভাল লাগলে আশা করি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন এবং এই ব্লগটি নিয়মিত পড়বেন।  

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top