ডিজিটাল মার্কেটিং কিভাবে করবো

ডিজিটাল মার্কেটিং কিভাবে করবো? কিভাবে অনলাইন মার্কেটিং করা যায়?

আপনি আপনার বিসনেসের জন্য ডিজিটাল মার্কেটিং করার কথা ভেবে থাকলে, সবার আগে আপনার প্রশ্ন আসবে- ডিজিটাল মার্কেটিং কিভাবে করবো? 

ডিজিটাল মার্কেটিং হচ্ছে একটা প্রসেস, আপনাকে কিছু বিষয় মাথায় রেখে ঠিকঠাক মতো পরিকল্পনা সাজাতে হবে, তাহলেই হয়ে যাবে আপনার ডিজিটাল মার্কেটিং প্ল্যান। আজকের লেখায় আমি আমার দীর্ঘদিনের মার্কেটিং প্ল্যান তৈরি করার অভিজ্ঞা তুলে ধরবো, কিভাবে অনলাইন মার্কেটিং করা যায়? স্টেপ বাই স্টেপ ডিজিটাল মার্কেটিং করার জন্য কি কি প্রয়োজন এবং ডিজিটাল মার্কেটিং এ কি কি কাজ করা হয়- সেই বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলবো। 

চলুন শুরু করা যাক। 

ডিজিটাল মার্কেটিং কি?

প্রথমে সংক্ষেপে আমরা একটু জেনে নেই, ডিজিটাল মার্কেটিং কি এবং কেন প্রয়োজন? 

কোন প্রতিষ্ঠান যখন ডিজিটাল প্লাটফর্ম ব্যবহার করে কোন প্রোডাক্ট বা সার্ভিসের প্রতি মানুষের আগ্রহ তৈরি করার চেষ্টা করে তখন এই প্রসেসকে বলে ডিজিটাল মার্কেটিং। 

তাহলে কেন মানুষের আগ্রহ তৈরি করতে হয়, কারণ আপনার প্রোডাক্ট বা সার্ভিস সম্পর্কে সাধারণ মানুষজনকে বিভিন্ন তথ্য জানাতে হবে- আপনার প্রোডাক্টের বিশেষত্ব কি? এই প্রোডাক্টটি কিভাবে তার সমস্যার সমাধান করতে পারে? এই প্রোডাক্ট কিভাবে অন্য সব প্রোডাক্টের চেয়ে আলাদা ইত্যাদি। 

আপনার প্রোডাক্টের ব্যাপারে এই বিষয়গুলো যখন সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছাবে, তখন সবার আগ্রহ তৈরি হবে আপনার এই প্রোডাক্টকে ঘিরে, এই আগ্রহ থেকে তারা একসময় ক্রেতায় পরিণত হবে। 

আপনার আল্টিমেট উদ্দেশ্য তো একজন সাধারণ মানুষকে আপনার প্রোডাক্ট বা সার্ভিসের কাস্টমারে পরিণত করা। তাই না? 

ডিজিটাল মার্কেটিং কি এবং কেন দরকার এটা বুঝলাম। এখন চলুন জেনে নেই, কিভাবে ডিজিটাল মার্কেটিং করা যায় বা ডিজিটাল মার্কেটিং কিভাবে করা হয়? 

ডিজিটাল মার্কেটিং কিভাবে করবো? ডিজিটাল মার্কেটিং করতে কি কি লাগে?  

যেহেতু ডিজিটাল মার্কেটিং একটা কোন সিঙ্গেল টাস্ক না, তাই ডিজিটাল মার্কেটিং করতে হলে আপনাকে বেশ কয়েকটি ধাপ অতিক্রম করতে হবে। অনেকগুলো কাজের সমষ্টিগত ফলাফল হচ্ছে ডিজিটাল মার্কেটিং। আমরা উপস্থাপনার সুবিদার্থে “কিভাবে ডিজিটাল মার্কেটিং করা যায়” এই সম্পূর্ণ বিষয়টা তিনটা ভাগে ভাগ করতে পারি- 

  • প্রস্তুতি পর্বঃ ডিজিটাল মার্কেটিং ক্যাম্পেইন শুরু করার আগে কি কি প্রয়োজন 
  • ক্যাম্পেইন টাইমঃ ডিজিটাল মার্কেটিং ক্যাম্পেইন চলমান সময়ে কি কি করতে হয়
  • ফলাফলঃ ডিজিটাল মার্কেটং ক্যাম্পাইন শেষে কি কি কাজ করবো

প্রস্তুতি পর্বঃ ডিজিটাল মার্কেটিং ক্যাম্পেইন শুরু করার আগে

এই পর্বটা সবেচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ প্রস্তুতির উপর নর্ভর করে কর্মফল। বিজ্ঞানী আইন্সটাইনের কথাই ধরা যাক- তিনি বলেছিলেন- কোন একটা কাজ করার জন্য আমাকে যদি ৬০ মিনিট সময় দেওয়া হয় আমি ৫৫ মিনিট ধরে ভাববো কাজটি কীভাবে কত সহজে সম্পন্ন করা যায় আর বাকি ৫ মিনিটে কাজটি শেষ করবো। 

তার মানে এখানে একটা বিষয় পরিষ্কার আপনার মার্কেটিং ক্যাম্পেইন কেমন হবে তা সম্পূর্ণরুপে নির্ভর করছে আপনি কত ভালভাবে প্রতিস্তিতি পর্ব শেষ করেছেন। 

একটা ক্যাম্পেইন শুরু করার আগে আপনাকে বেশ কিছু জিনিস গুছিয়ে নিতে হবে। মার্কেটিং ক্যাম্পেইন শুরু করার আগে যে যে কাজগুলো করতে হবে সেগুলোকে আমি প্রস্তুতি সেকশনে রাখছি। চলুন দেখে আসি- কোন কোন বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করতে হবে এখানে-  

১. SWOT এনালাইসিসঃ 

SWOT মানে Strengths, Weaknesses, Opportunities, and Threats. আপনি আপনার বিসনেসের বর্তমানে পরিস্থিতি এনালাইসিস করবেন। আপনি কোথায় আপনার কম্পিটিটরদের চেয়ে ভাল, কোথায় কোথায় আপনার বিসনেসের অবস্থান খারাপ, কোন কোন জায়গাতে আপনি খুব অল্পতেই সুযোগ তৈরি করে সুবিধা নিতে পারেন এবং কোন কোন জিনিসগুলো আপনাকে সামনে আরও বিপদে ফেলতে পারে। 

এই বিষয়গুলোকে এনালাইসিস করে একটা রিপোর্ট তৈরি করাকে বলে SWOT এসানালাইসিস।    

২. মার্কেটিং গোল সেটিং

আপনি এই ক্যাম্পেইন থেকে কি চান, কতটুকু এচিভ করতে চান, সেটা নিয়ে খুব গুছিয়ে মার্কেটিং গোল সেট করুন। আমরা বেশিরভাগ মানুষ যে কোন কাজে ঠিকভাবে গোল সেট করতে পারি না। যার কারণে আমাদের কাজগুলো সঠিকভাবে আমরা করতে পারি। 

গোল সেটিং নিয়ে সারা বিশ্বে খুব জনপ্রিয় একটি মেথড আছে। যেটাকে SMART গোল সেটিং বলে। এই পদ্ধতিটি শুধু মার্কেটিং এর জন্য না। যেকোন কাজে এভাবে গোল সেট করতে পারেন আপনিও। 

৩. প্রোডাক্ট এনালাইসিস

আপনি যে প্রোডাক্ট বা সার্ভিস নিয়ে মার্কেটিং করবেন তা নিয়ে বেশ কিছু বিষয় ভাবতে হবে। প্রোডাক্টের ফিচার এবং বেনিফিট কি? এই প্রোডাক্ট মানুষের কি কি সমস্যার সমাধান করে? অন্য প্রোডাক্টগুলোর চেয়ে এই প্রোডাক্ট কোন দিক থেকে আলাদা। অন্য প্রডাক্টগুলো কি অফার করছে? আপনার প্রোডাক্টের বেনিফিট অনুয়ায়ি দাম কেমন, অন্যদের প্রোডাক্টগুলোর দাম কেমন ইত্যাদি বিষয়গুলোকে সতর্কতার সাথে নোট করতে হবে। 

৪. অডিয়েন্স সিলেকশন

এখন সময় অডিয়েন্স নিয়ে ভাবার। প্রোডাক্ট এনালাইসি থেকে পাওয়া তথ্য অনুয়ায়ি আপনার প্রোডাক্টের ফ্যাক্টরগুলো যেমন- দাম, ইউনিক ভ্যালু, বেনিফিট ইত্যাদি বিষয়গুলো মাথায় নিয়ে এই প্রোডাক্টটা বিশেষভাবে কাদের জন্য তৈরি সেটি খুব ভাল করে ভাবতে হবে। প্রপার অডিয়েন্স টার্গেট করতে হবে। অডিয়েন্স টার্গেট করার সময় যত বেশি ডিটেইলে যাওয়া যাবে ততই ভাল। 

অডিয়েন্সকে আমরা বিভিন্নভাবে সিগমেন্ট করতে পারি। জিওগ্রাফি অনুয়ায়ি, ডেমোগ্রাফি অনুয়ায়ি, সাইকোগ্রাফি এবং বিহেবিয়ার অনুয়ায়ি।

একটা প্রোডাক্ট বা সার্ভিসের টার্গেট অডিয়েন্সকে সংক্ষেপে TA(Target Audience) বলে বা কেউ কেউ টার্গেট গ্রুপ বা TG(Target Group) ও বলে।  

৫. বায়ার পারসোনা

বায়ার পারসোনা হচ্ছে আপনার সম্ভাব্য কাস্টমারদের কিছু কাল্পনিক চরিত্র তৈরি করা। আমরা অডিয়েন্স সিগমেন্টেশনে যেমন একটা গ্রুপকে নিয়ে কাজ করেছি যেখানে একই ধরণের অনেকগুলো মানুষকে ডিফাইন করেছি যাকে আমরা TG বা TA বলেছি। 

কিন্তু এখানে আমরা আমরা এই গ্রুপের অসংখ্য মানুষের মধ্যে থেকে কয়েকজন কাল্পনিক মানুষ বেঁছে নেবো। এবং তাদের পারসোনা তৈরি করবো। উদাহরণস্বরূপ এখানে থাকবে- 

  • একজন মানুষের নাম 
  • সে কোথায় থাকে
  • সে কি করে 
  • তার বয়স কত 
  • তার ফ্যামিলিতে কে কে আছে 
  • তার ইনকাম কত 
  • তার স্বপ্ন কি 
  • অভ্যাস কি 
  • কি করতে পছন্দ করে 
  • তার অপচন্দ কি 

ইতাদি যত বেশি কিছু ভাবে পারসোনা তৈরি করা যাবে ততই ভাল।   

৬. ক্যাম্পেইন বাজেটিং

মার্কেটিং বাজেট খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি পার্ট। এখানে আপনাকে সঠিকভাবে বাজেট প্লানিং করতে হবে। একটা মার্কেটিং প্ল্যানের প্রতিটা বিষয় একটা আরেকটার সাথে জড়িত। তার মানে আপনাকে উপরের কাজগুলো ঠিকঠাক মতো করেই পরের স্টেজে যেতে হবে।

অনেকেভাবে ডিজিটাল মার্কেটিং বা যে কোন মার্কেটিং বাজেট করা যেতে পারে। আমি এখানে তারমধ্যে কয়েকটি মেথড তুলে ধরছি- 

  • সিচুয়েসনাল বাজেটিংঃ কোন নির্দিষ্ট সীমা নেই এখানে। আপনার প্রতিষ্ঠানের বর্তমান অবস্থা যেমন সেই অনুয়ায়ি আপনার পক্ষে মার্কেটিং এ যতটুকু বাজেট রাখা সম্ভব ততটুকু করলেন। বিশেষ করে স্টার্টাপ প্রতিষ্ঠানগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি অবলম্বন করে।
  • সেলস পারসেন্ট বাজেটিংঃ আপনার প্রতিষ্ঠান যদি ইতোমধ্যে মার্কেটিং করে থাকে, তাহলে আগের ডাটা অনুয়ায়ি আপনি জানেন যে, আপনার কতটুকু সেলস টার্গেট পূরণ করতে আপনার মার্কেটিং এ কত খরচ হয়েছে। এখন আপনি নতুন সেলস টার্গেট অনুয়ায়ি সেই আনুপাতিক হারে বাজেট নির্ধারণ করুন। সাধারণত অনেকে ইনকামের ১০ থেকে ২০ ভাগ মার্কেটিং এর জন্য খরচ করে থাকে।
  • কম্পিটিটর বাজেটিংঃ আপনার কম্পিটিটররা কীভাবে মার্কেটিং করছে, তাদের নিয়ে এনালাইসিস করুন। তাদের থেকে ইন্সপিরেশন নিয়ে বোঝার চেষ্টা করুন যে তারা মার্কেটিং এ কেমন ইনভেস্ট করছে। সেই অনুয়ায়ি আপনার বাজেট নির্ধারণ করুন।
  • অবজেকটিভ বাজেটিং মেথডঃ আপনার নিশ্চয়ই ইতোমধ্যে মার্কেটিং অবজেকটিভ বা গোল ঠিক করা আছে। এখন আপনার প্রতিটি অবজেক্টিভ বা টার্গেট অনুয়ায়ি আলাদা আলাদাভাবে বাজেট করুন।
  • টাস্ক বাজেটিং মেথডঃ এটা হচ্ছে টাস্কট বাজেটিং মেথড। মানে আপনার এই সম্পূর্ণ ক্যাম্পেইনে অনেকগুলো কাজ আছে। সবগুলো কাজ মিলে কালেক্টিভলি আপনার মার্কেটিং ক্যাম্পেইন। এই পদ্ধতিতে আপনি বাজেটিং করবেন প্রতিটি টাস্ক অনুয়ায়ি। মনে করেন, আপনাকে ৫ টা কাজ করতে হবে। আপনি হিসেব করবেন কাজ ১ করতে আপনার কত খরচ হবে, কাজ ২ করতে আপনার কত খরচ হবে, কাজ ৩ করতে কত খরচ হবে, এভাবে সবগুলো কাজের খরচ হিসেব করে সেই অনুয়ায়ি টোটাল মার্কেটিং বাজেট ঠিক করুন।

আশা করি মার্কেটিং বাজেট বা ডিজিটাল মার্কেটিং বাজেট কীভাবে করতে হয় শিখে গেলেন।    

৭. চ্যানেল সিলেকশন

ডিজিটাল মার্কেটিং চ্যানেল কি? ডিজিটাল মার্কেটিং চ্যানেল হচ্ছে- আপনি কোন কোন ডিজিটাল প্লাটফর্মকে টার্গেট করে মার্কেটিং করছেন সেগুলো। 

যেমন আপনি যদি ফেসবুকে মার্কেটিং করেন তখন ফেসবুক আপনার মার্কেটিং চ্যানেল, যদি ইউটিউবকে টার্গেট করে মার্কেটিং করেন তাহলে ইউটিউব হবে আপনার মার্কেটিং চ্যানেল।

এই পর্যায়ে আপনাকে আপনার ডিজিটাল মার্কেটিং চ্যানেল খুঁজে নিতে হবে। অর্থাৎ- আপনি কোন কোন প্লাটফর্মে মার্কেটিং করবেন সেগুলো নির্ধারণ করতে হবে।

আমরা মার্কেটিং কোথায় করি? 

খুব সিম্পল উত্তর, যেখানে আমার প্রোডাক্ট বা সার্ভিসের টার্গেটেড মানুষজনকে একসাথে অনেক মানুষ পাওয়া যায় সেখানে। 

ডিজিটাল মার্কেটিং চ্যানেল সিলেকশন করবেন- আপনার টার্গেট অডিয়েন্স অনুয়ায়ি। 

আপনি যদি দেখেন আপনার টার্গেট অডিয়েন্স ফেসবুকে বেশি একটিভ, তাহলে আপনাকে ফেসবুকে মার্কেটিং করতে হবে। 

আপনি যদি দেখেন আপনার টার্গেট অডিয়েন্স ইউটিউবে বেশি একটিভ তাহলে আপনাকে ইউটিউবে মার্কেটিং করতে হবে। 

আপনি যদি জানেন আপনার অডিয়েন্স আপনার প্রোডাক্ট বা সার্ভিস সম্পকিত বিভিন্ন প্রশ্ন লিখে সার্চ ইঞ্জিনে সার্চ করে তাহলে আপনাকে এসইওতে ফোকাস করতে হবে অথবা সার্চ ইঞ্জিনে সার্চ অ্যাড চালাতে হবে। 

ক্যাম্পেইন টাইমঃ ডিজিটাল মার্কেটিং ক্যাম্পেইন চলমান সময়ে

প্রস্তুতি শেষ। সময় এখন ক্যাম্পেইন লঞ্চ করার। ক্যাম্পেইন লঞ্চ করতে হলে এখন দরকার কনটেন্ট। 

কনটেন্ট কি? কনটেন্ট হচ্ছে আমি যে আমার অডিয়েন্সের কাছে আমার ম্যাসেজ পৌঁছাবো তার মাধ্যম। কনটেন্ট বিভিন্ন ফর্মেটে হতে পারে। ভিডিও, ইমেজ, টেক্সট, অডিও, পাওয়ার পয়েন্ট প্রেসেন্টেশন, পিডিএফ, ডক, ব্লগ ইত্যাদি। আমি আমার ক্যাম্পেইনের জন্য কি ধরণের কনটেন্ট বানাবো?  

১. কনটেন্ট স্ট্রাটেজি ক্রিয়েশন

এই প্রশ্নের উত্তর নির্ভর করে সম্পূর্ণরূপে আপনার অডিয়েন্স এবং প্রোডাক্ট বা সার্ভিসের উপর। এমন অনেক প্রোডাক্ট বা সার্ভিস আছে যেগুলো ভিজুয়াল সেন্ট্রিক- মানে আপনি যতই লিখে প্রকাশ করেন না কেন, না দেখা পর্যন্ত পরিপূর্ণভাবে বোঝা যাবে না, তাহলে দেখাতে হলে আপনাকে ভিডিও অথবা ইমেজ কনটেন্ট ব্যবহার করতে হবে। যেমন- আপনি শাড়ির জন্য জন্য কনটেন্ট তৈরি করলে, ইমেজ বা লেখার চেয়ে ভিডিও বেশি উপযোগী। 

আবার এমন অনেক টপিক আছে যেখানে অনেককিছু বিস্তারিতভাবে লিখে বোঝানোটা বেশি সুবিধাজনক হয়, সেক্ষেত্তে হয়ত ব্লগ কনটেন্ট বেশি উপযোগী। 

কনটেন্টের টোন আরেকটা বিষয়- মানে আপনি কোন স্বরে কথা বলছেন, কি ধরণের ভাষায় কমিউনিকেট করছেন। 

১৫ বা ১৬ বছরের অডিয়েন্সকে আপনি ইম্প্রেস করার জন্য যেই টোনে কথা বলবেন, ৫০ বছরের অডিয়েন্সের সাথে নিশ্চয়ই একই টোনে কথা বললে ঠিকমতো কমিউনিকেট করতে পারবেন না। 

অর্থাৎ আমাকে আমার অডিয়েন্সের পছন্দ, তাদের রুচি, তাদের কমফোর্ট জোন ইত্যাদি অনুয়ায়ি কনটেন্ট তৈরি করতে হবে।  

২. কন্টেন্টর ডিস্ট্রিবিউশন

কনটেন্ট তৈরি হয়ে গেল। এখন কাজ হচ্ছে কনটেন্ট ডিস্ট্রিবিউট করা। মানে আমার কনটেন্ট কোথায় কোথায় যাবে কীভাবে যাবে, কখন যাবে ইত্যাদি পরিকল্পনা করা। 

টার্গেট অডিয়েন্স অনুয়ায়ি একেকটা প্রোডাক্ট বা সার্ভিসের ক্ষেত্রে একেক ধরণের কনটেন্ট একেক সময় ভাল কাজ করে। 

আপনাকে আইডেন্টিফাই করতে হবে আপনার টার্গেট অডিয়েন্স কোন সময়ে, কোন কোন দিন সবচেয়ে বেশি একটিভ থাকে নির্দিষ্ট কোন ডিজিটাল প্লাটফর্মে। সেই অনুয়ায়ি আপনাকে কনটেন্ট পাবলিশ করতে হবে বা ক্যাম্পেইন চালাতে হবে। 

আপনি যদি অর্গানিক ক্যাম্পেইন করেন তাহলে আপনাকে রেগুলার প্রচুর পরিমাণে এডুকেটিভ কনটেন্ট পাবলিশ করতে হবে যা আপনার টার্গেট গ্রুপের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করে। 

৩. পারফর্মেন্স ট্রাকিং

কনটেন্ট ডিস্ট্রিবিউশন এবং পাবলিশিং এর পর আপনাকে কাজ করতে হবে KPI নিয়ে। 

কেপিআর বা KPI কি? KPI হচ্ছে Key Performance Indicators মানে যেসব প্যারামিটার দিয়ে আপনি বুঝবেন আপনার ক্যাম্পেইনের রেজাল্ট কেমন হচ্ছে সেগুলোকে বলে Key Performance Indicators. যেমন আপনি যদি একটা ভিডিও ফেসবুকে পাবলিশ করি, কখন বুঝবো আমার পোস্টটা ভাল পারফর্ম করছে? কি কি বিষয় দিয়ে সেটা বুঝবো? 

হতে পারে কি পরিমাণ মানুষ আমার ভিডিওটা দেখেছে, কত সময় ধরে মানুষজন আমার ভিডিওটা দেখেছে? কি পরিমাণ মানুষ ভিডিওটা শেয়ার করেছে? কয়জন কমেন্ট করেছে? কয়জন রিএকশন দিয়েছে? আমার ভিডিওটা কতজন মানুষের কাছে পৌঁছেছে ইত্যাদি এগুলোকে আমি বলতে পারি আমার ভিডিওর KPI. 

একটা ক্যাম্পেইজনের Key Performance Indicators কি হবে তা নির্ভর করে ক্যাম্পেইনের গোলের উপর। 

আপনার গোল সেটআপ এর উপর নির্ভর করে, টার্গেট অডিয়েন্স, কনটেন্ট টাইপ, কনটেন্ট প্লাটফর্ম ইত্যাদি সব কিছুর উপর বিবেচনা করে আপনাকে Key Performance Indicators সেট করতে হবে। 

এই ধাপে আপনার কাজ হচ্ছে Key Performance Indicators অনুয়ায়ি কেমন রেজাল্ট পাচ্ছেন সেগুলো খুব ভাল করে মনিট্রিং করা। 

যদি প্রত্যাশিত রেজাল্ট না আসে, তাহলে আবার একশন নেওয়া। তবে এটা মনে রাখতে হবে যে, কোন একটা ক্যাম্পেইন লঞ্চ করার পর ঐ প্লাটফর্মকে কিছুটা সময় দিতে হবে ক্যাম্পেইনকে সফল করার জন্য। এই সময়টাকে বলে লার্নিং ফেইজ। 

কারণ প্রায় প্রতিটা প্লাটফর্মে আলাদা আলাদা অ্যালগরিদম আছে, যারা প্রথম দিকে একটা ভাল পরিমাণ সময় নেয়, ক্যাম্পেইনকে অপটমাইজ করার জন্য। এই সময়টাতে বিভিন্ন পরীক্ষা নিরিক্ষা করে তারপর নির্দিষ্ট সময় পর ফিক্স করে ফেলে আপনার ক্যাম্পেইন কেমন হবে না হবে সেটা।   

ফলাফলঃ ডিজিটাল মার্কেটং ক্যাম্পাইন শেষে

ক্যাম্পেইন শেষ হলে এই ধাপে কাজ শুরু হবে। এই ধাপে আমরা সম্পূর্ণরূপে ফোকাস করবো ক্যাম্পেইনের ফলাফলের দিকে। আমরা এতদিন যে কাজ করেছি তা নিয়ে চূড়ান্ত হিসেবনিকেশ করার সময় এখন।

১. পারফর্মেন্স এনালাইসিস

এখানে আমরা দেখবো, আমাদের গোল অনুয়ায়ি রেজাল্ট কতটা ভাল হয়েছে বা কতটা খারাপ হয়েছে সেটা। 

ভাল হলে ভাল কেন হয়েছে তা খুঁজে খুঁজে বের করা, কারণ এই ডাটা আপনাকে পরের ক্যাম্পেইনে হেল্প করবে। আর যদি খারাপ হয়, তাহলে কেন খারাপ হয়েছে সেটাও খুঁজে বের করতে হবে আপনাকে কারণ তাহলে আপনি এই ক্যাম্পেইনের ভুলগুলো বুঝতে পারবেন এবং সেটা আর পরবর্তী ক্যাম্পেইনে করবেন না। 

২. রিপোর্টিং

ভাল মন্দ দুইটার যে কোনটা হতে পারে। সবসময় যে সব ক্যাম্পেইন সফল হয় ব্যাপারটা এমন না, অনেক সময় আপনার ক্যাম্পেইন ব্যর্থ হবে, এই মানসিকতাও আপনার থাকতে হবে। 

সেই ভাল মন্দ নিয়ে এখন একটি সুন্দর রিপোর্ট তৈরি করুন। এই রিপোর্ট আপনাকে পরবর্তী পদক্ষেপে অনেক বেশি সহায়তা করবে। 

শেষকথা

আমার দীর্ঘদিনের ডিজিটাল মার্কেটিং প্ল্যান ও স্ট্রাটেজি করার অভিজ্ঞতা থেকে আমি চেষ্টা করেছি এই লেখাটির মাধ্যমে কিভাবে ডিজিটাল মার্কেটিং করা যায় সম্পূর্ণ বিষয়টি যতটা সম্ভব বিস্তারিত লিখতে। আশা করি ডিজিটাল মার্কেটিং কিভাবে করবো এই বিষয়ে আপনাদের সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেছেন। তাও যদি মনে হয় কোন কিছু আরেকটু ভাল করে বুঝতে চান, তাহলে আমাকে নক করতে পারেন।

আপনার প্রতিষ্ঠানের জন্য ডিজিটাল মার্কেটিং স্টাটেজি করাতে চাইলে আমাকে নক করতে পারেন। ধন্যবাদ।  

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top