ডিজিটাল মার্কেটিং এর কাজ কি

ডিজিটাল মার্কেটিং কি করে? ডিজিটাল মার্কেটিং এর কাজ কি?

ডিজিটাল মার্কেটিং নিয়ে আমরা এতো কথা শুনছি চাপরাশে যে, স্বাভাবিক একটা প্রশ্ন চলে আসে আসলে ডিজিটাল মার্কেটিং কি করে বা ডিজিটাল মার্কেটিং এর কাজ কি? 

আজকের লেখায় আমি এই বিষয়ে একটা পরিষ্কার ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করবো, ডিজিটাল মার্কেটিং এর কাজ এবং কোন কোন ক্ষেত্রে ডিজিটাল মার্কেটিং সবচেয়ে উপযোগী। 

ডিজিটাল মার্কেটিং আসলে কি?

ডিজিটাল মার্কেটিং হচ্ছে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে মার্কেটিং করা। 

যখন কোন প্রতিষ্ঠান তার পণ্য বা সেবা প্রচার করার জন্য ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে তখন তাকে ডিজিটাল মার্কেটিং বলে। 

যেমন- কোন প্রতিষ্ঠান ফেসবুক বা ইউটিউবে যদি মার্কেটিং করে তাহলে সেটা ডিজিটাল মার্কেটিং। 

ডিজিটাল মার্কেটিং কি বিস্তারিত জানুন। 

ডিজিটাল মার্কেটিং এর কাজ কি

ডিজিটাল মার্কেটিং এর ডেফিনেশন থেকে আমরা এটা বুঝতে পারছি যে ডিজিটাল মার্কেটিং আসলেই মার্কেটিংয়েরই একটা পার্ট। 

আসলে অনেকে ডিজিটাল মার্কেটিং এবং ট্র্যাডিশনাল মার্কেটিং এই দুইটা বিষয়কে একটার সাথে আরেকটাকে বেশ সাংঘর্ষিক করে তোলে।

মানে কেউ কেউ ডিজিটাল মার্কেটিং এর গুরুত্ব প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে ট্র্যাডিশনাল মার্কেটিং কে খুব ছোট করে আবার অন্যদিকে ট্র্যাডিশনাল মার্কেটিং নিয়ে যারা কাজ করে তারা আবার ডিজিটাল মার্কেটিংকে অস্বীকার করতে দ্বিধা করে না। 

আসল জিনিসটা হচ্ছে- দুইটাই দুইটার পরিপূরক। দুইটাই মার্কেটিং, মৌলিক জায়গায় দুইটা আসলে একই জিনিস। 

তাহলে ডিজিটাল মার্কেটিং এর সাথে ট্র্যাডিশনাল মার্কেটিং এর পার্থক্য আসলে কোথায়? 

পার্থক্যটা হচ্ছে- প্রকাশ ভঙ্গিতে বা এক্সপ্রেশনে। কিন্তু লক্ষ্য ও কনসেপ্ট কিন্তু একই।

ট্র্যাডিশনাল মার্কেটিং এ আপনার হাতের টুলগুলো- পুরনো থাকবে, যেমন- রেডিও, টেলিভিশন, নিউজপেপার, বিলবোর্ড, ব্যানার, লিফটেট, ইভেন্ট স্পন্সর ইত্যাদি মাধ্যমে আপনি পণ্যের প্রচার বা প্রসার করছেন। 

আর ডিজিটাল মার্কেটিং এ আপনি সব ডিজিটাল প্লাটফর্ম যেমন- ফেসবুক, ইউটিউব, সার্স ইঞ্জিন ইত্যাদি ব্যবহার করছেন। 

তার মানে ডিজিটাল মার্কেটিং এর কাজ হচ্ছে আপনি আপনার টার্গেট অডিয়েন্সের কাছে আপনার পণ্য বা সেবার সম্পর্কে ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে জানাবেন।   

ডিজিটাল মার্কেটিং কীভাবে কাজ করে? ডিজিটাল মার্কেটিং প্ল্যান 

ডিজিটাল মার্কেটিং শুরু করতে হলে আপনাকে বেশ কিছু স্টেপের মধ্যে দিয়ে যেতে হবে। এই প্রসেসগুলো নিয়েই ডিজিটাল মার্কেটিং প্ল্যান। তার মানে আপনাকে প্রথমেই মার্কেটিং প্ল্যান করে নিতে হবে। 

প্রোডাক্ট

প্রথমে আপনাকে আপনার প্রোডাক্ট নিয়ে ভাবতে হবে। প্রোডাক্টের ফিচার ও বেনিফিটগুল লিস্ট করতে হবে। আপনার প্রোডাক্ট মার্কেটের সেইম ক্যাটাগরির অন্য সব প্রোডাক্ট থেকে কীভাবে আলাদা তা খুঁজে বের করতে হবে। না থাকলে, প্রোডাক্টে এমন ফিচার অ্যাড করা উচিত- যেটা অন্য কারো প্রোডাক্টে নেই। আপনার প্রোডাক্ট মানুষজনের সমস্যাগুলো কত সহজে সমাধান করতে পারে ইত্যাদি আরও যে যে বিষয়গুলো আছে সেগুলো লিস্ট করতে হবে। 

টার্গেট অডিয়েন্স

ডিজিটাল মার্কেটিং টার্গেট অডিয়েন্স বা টার্গেট গ্রুপ কি? টার্গেট অডিয়েন্স ( টিএ) এবং টার্গেট গ্রুপ (টিজি) দুইটা একই বিষয়। যারা আপনার পণ্য বা সেবার সম্ভাব্য ক্রেতা এবং ভোক্তা তাদেরকে আমরা টার্গেট অডিয়েন্স বা টার্গেট গ্রুপ বলে পারি। 

ডিজিটাল মার্কেটিং শুরু করতে হলে সবার আগে আপনাকে টার্গেট অডিয়েন্স বা টার্গেট গ্রুপ ঠিক করে নিতে হবে। টার্গেট অডিয়েন্স ঠিক করা ডিজিটাল মার্কেটিং এর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি পার্ট। 

কীভাবে টার্গেট অডিয়েন্স ঠিক করবেন তার জন্য এই লেখাটি পড়ুন।

ডিজিটাল চ্যানেল

আপনার প্রোডাক্টের জন্য টার্গেট অডিয়েন্স ঠিক হয়ে গেলে এখন আপনার সময় চলে আসেছে ডিজিটাল চ্যানেল নির্বাচন করার। 

ডিজিটাল মার্কেটিং চ্যানেল কীসের উপর ভিত্তি করে নির্বাচন করবেন? 

ব্যাপারটা খুব সিম্পল। আপনার টার্গেট অডিয়েন্স বা টার্গেট গ্রুপ অনুয়ায়ি সবচেয়ে বেশি মানুষ কোন ডিজিটাল প্লাটফর্মে পাওয়া যেতে পারে ভাবুন। আইডিয়া নিন। রিসার্চ করুন। 

আপনার অডিয়েন্স কি সবচেয়ে বেশি ফেসবুকে থাকে নাকি ইউটিউবে থাকে নাকি টিকটকে। 

যেখানে আপনার অডিয়েন্স সবচেয়ে বেশি এভেইলেবল থাকবে সেটাই হচ্ছে আপনার ডিজিটাল মার্কেটিং চ্যানেল। 

কনটেন্ট

চ্যানেল নির্বাচন হয়ে গেলে এই ধাপটা আপনার জন্য অনেক সহজ হয়ে গেছে। এখানে আপনার কাজ হচ্ছে কনটেন্ট ক্রিয়েশন। কি ধরণের কনটেন্ট ক্রিয়েট করবেন? কোন ফর্মেটে কনটেন্ট ক্রিয়েট করবেন? ভিডিও? ব্যানার ইমেজ? ব্লগ? এটা নির্ভর করে আপনার অডিয়েন্সের সাইকোলজি বা মন মানসিকতার উপর। 

তাদের সাইকোলজি চিন্তা করে, কনটেন্টের টপিক, কনটেন্ট প্রেজেন্টেশন, কনটেন্ট ফর্মেট ইত্যাদি নির্বাচন করুন।

কনটেন্ট নিয়ে বিস্তারিত শিখতে পড়ুন।  

ডিস্ট্রিবিউশন

কনটেন্ট হয়ে গেল এখন কাজ হচ্ছে- কোন কনটেন্ট কখন, কোথায়, কীভাবে, কাকে দিয়ে পাবলিশ করবেন সেটা নিয়ে ভাবা ও পরিকল্পনা করা। 

সো হয়ে গেল, ডিজিটাল মার্কেটিং প্ল্যান। আরও বিস্তারিত জানতে ডিজিটাল মার্কেটিং প্ল্যান কীভাবে করবেন এই লেখাটি পড়ুন। 

ডিজিটাল মার্কেটিং দিয়ে কি কি কাজ করা যায়? 

ডিজিটাল মার্কেটিং একটা বিশাল বড় ইন্ডাস্ট্রি। এখানে ডিজিটাল মার্কেটিং দিয়ে আপনার পক্ষে অনেক কিছুই করা সম্ভব। কি কি করা যেতে পারে তা নিয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করা হল।  

ব্যবসা ক্ষেত্রে ডিজিটাল মার্কেটিং

ব্যবসা বানিজ্যের ক্ষেত্রে ডিজিটাল মার্কেটিং হচ্ছে আশীর্বাদ। ডিজিটাল মার্কেটিং সবার জন্য সহজলভ্য হওয়ার যে কেউ অল্প পুঁজি নিয়েও শুরু করতে পারছে অনলাইন ব্যবসা। ফলে তৈরি হচ্ছে অসংখ্য উদ্যোক্তা। এবং এই ছোট ছোট প্রতিষ্ঠানগুলো নিজের চেষ্টা ও ক্রিয়েটিভিটি দিয়ে অল্প সময়ের মধ্যে ব্যবসাকে নিয়ে যাচ্ছে পরের ধাপে। খরচ অল্প, সহজ টার্গেটিং, সহজে ম্যানেজ করা, রিয়েল টাইম কাস্টমারদের সাথে কানেকশন ইত্যাদি কারণগুলোতে ব্যবসায় ডিজিটাল মার্কেটিং হয়ে উঠেছে। বেশ জনপ্রিয়। 

পারসোনাল ব্রান্ডিং এর জন্য ডিজিটাল মার্কেটিং

পারসোনাল ব্রান্ডিং এখন অনেক সহজ এই ডিজিটাল মাধ্যমে। যেকারণে যে কেউ- মেরিট থাকেই খুব অল্প সময়ের মধ্যে হয়ে উঠতে পারে ইন্ডাস্ট্রি লিডার। ফলে পারসোনাল ব্র্যান্ডকে কাজে ক্যারয়ারে খুব সহজে উপরের দিকে উঠে আসা যায়। তৈরি হয় হাজারটা সুযোগ।

ডিজিটাল এজেন্সি বিসনেস

ডিজিটাল মার্কেটাররা একসময় নিজেরা ডিজিটাল এজেন্সি শুরু করে নিজের স্বপ্নকে বাস্তাবায়ন করতে পারছে। 

আপনি ডিজিটাল এজেন্সি দিয়ে দেশ ও দেশের বাইরে ক্লায়েন্টের কাজ করে নিজের ডিজিটাল স্কিলকে সহজেই বিসনেসে রূপান্তর করতে পারছেন। 

ডিজিটাল মার্কেটিং ফ্রিল্যাসিং

বর্তমানে ফ্রিল্যান্সিং করে আয় করার যতগুলো সেক্টর আছে তার মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় একটি সেক্টর হচ্ছে ডিজিটাল মার্কেটিং। ডিজিটাল মার্কেটিং এর কাজ করে আপনি দেশ ও দেশের বাইরে থেকে প্রচুর পরিমাণে আয় করতে পারেন ফ্রিল্যাসিং মার্কেটপ্লেসগুলো যেমন- আপওয়ার্ক, ফাইবার থেকে। 

অনলাইনে ডিজিটাল মার্কেটারদের চাহিদা অনেক। আপনি এই স্কিলটি ডেভেলপ করে সহজেই হয়ে উঠতে পারেন একজন সফল ফ্রিল্যান্সার। 

ডিজিটাল মার্কেটিং কোর্পোরেট ক্যারিয়ার

প্রায় সব প্রতিষ্ঠানই একটু একটু করে তাদের মার্কেটিং ফোকাস নিয়ে যাচ্ছে ডিজিটালে। অনেক প্রতিষ্ঠান বাইরে থেকে ডিজিটাল মার্কেটার হায়ার না করে বা কোন ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সিকে দিয়ে কাজ না করিয়ে নিয়েরাই ইনহাউজ টিম তৈরি করে ডিজিটাল মার্কেটিং করছে। 

কিন্তু খুব ভাল মানের ডিজিটাল মার্কেটারের অভাব বাংলাদেশে। আপনি চাইলেই এই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে একজন প্রফেশনাল ডিজিটাল মার্কেটার হিসেবে আপনার স্বপ্নের প্রতিষ্ঠানে কাজ শুরু করে দিতে পারেন। ডিজিটাল মার্কেটিং ক্যারিয়ার বর্তমানে ক্যারিয়ার হিসেবে খুবই জনপ্রিয়। 

ডিজিটাল মার্কেটিং ব্লগিং   

ব্লগিং হচ্ছে ডিজিটাল মার্কেটিং ইন্ডাস্ট্রির অন্যতম একটি জনপ্রিয় এবং আকর্ষণীয় পেশা। এর জন্য আপনাকে সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন খুব ভাল করে জানতে হবে। মূল বিষয়টা হচ্ছে আপনি যে কোন টপিকে একটা ওয়েবসাইট বানাবেন এবং সেই ওয়েবসাইটে ঐ বিষয়ে মানুষের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে কনটেন্ট লিখবেন যেগুলোর উত্তর জানার জন্য মানুষ সার্চ ইঞ্জিন যেমন- গুগল ব্যবহার করে। 

আপনি কনটেন্টগুলোকে ঠিকঠাক মতো এসইও করে সার্চ ইঞ্জিন থেকে আপনার ওয়েবসাইটে ভিজিটর নিয়ে আসবেন। এর ভিজিটরদেরকে বিভিন্ন উপায়ে মনিটাইজ করা যায়, মানে আপনার ওয়েবসাইটে যত বেশি ভিজিটর হবে, তত বেশি ইনকাম হবে। 

একটা ওয়েবসাইটে আপনি যদি সঠিকভাবে কাজ করতে পারেন তাহলে মোটামুটি ৬-৮ মাসের মধ্যে ওয়েবসাইটের ইনকাম ৫০০ ডলারে নিয়ে আসা সম্ভব। ১ বছরে সেটা ১০০০ ডলার প্রতি মাসে ইনকাম এমন একটা জায়গায় নিয়ে আসতে পারেন। 

মাসে মাসে আপনার ওয়েবসাইট থেকে এই যে ইনকাম জেনারেট হচ্ছে- এটাই হচ্ছে প্যসিভ ইনকাম। আপনি চাইলে প্যাসিভ ইনকাম করতে পারেন অথবা ওয়েবসাইট সেল করে দিতে পারেন। 

একটা ওয়েবসাইট যেটা মাসে ১০০০ ডলার ইনকাম করে এমন একটা সাইট আপনি অন্তত ৩০ থেকে ৪০ গুন দামে যেমন- ৩০,০০০ ডলার থেকে ৪০,০০০ ডলার দামে অনলাইন মার্কেটপ্লেসে বিক্রি করতে পারেন।  

ডিজিটাল মার্কেটিং এর গুরুত্ব নিয়ে আরও জানতে এই ব্লগটি পড়ুন। 

শেষকথা

বর্তমানে ব্যবসা বাণিজ্যে ডিজিটাল মার্কেটিং হয়ে উঠেছে অবিচ্ছেধ্য অংশ। কারণ দিন দিন ট্র্যাডিশনাল মাধ্যমগুলো ব্যাকডেটেড হয়ে যাচ্ছে। মানুষজন ডিজিটাল মাধ্যমগুলোতে ঝুঁকছে। 

আপনার প্রতিষ্ঠান যেমনই হোক না কেন, এখন থেকেই আপনার উচিত আপনার প্রতিষ্ঠানকে ডিজিটাল মার্কেটিং এ নিয়ে আসা। ডিজিটাল মার্কেটিং এর গুরুত্ব বলে শেষ করা যাবে না। 

আপনি যদি এখনো ডিজিটাল মার্কেটিংকে ইগনোর করে থাকেন, তাহলে নিশ্চিতভাবে আপনি পিছিয়ে পড়ছেন। আশাকরি এই আর্টিকেলে আপনি ডিজিটাল মার্কেটিং এর কাজ কি এবং ডিজিটাল মার্কেটিং কীভাবে করতে হয় এই বিষয়টা নিয়ে একটা ভাল ধারণা পেয়েছেন।

আর আপনি যদি ক্যারিয়ার হিসেবে ডিজিটাল মার্কেটিং নিয়ে ভেবে থাকেন, তাহলে নিশ্চিন্তে শুরু করে দিন। কারণ সত্যি বলতে এখনো বাংলাদেশে খুব ভাল মানের ডিজিটাল মার্কেটারের সংখ্যা খুবই কম। এখন শুরু করে যদি খুব ভালভাবে আগামী সময়টা কাজে লাগাতে পারেন, তাহলে অল্প সময়ের মধ্যে আপনার একটা ডিজিটাল মার্কেটিং ক্যারিয়ার দাঁড়িয়ে যাবে।  

আপনাকে ধন্যবাদ এতক্ষণ এই আর্টিকেলটি পড়ার জন্য। ভাল লাগলে শেয়ার করুন। 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top