ডিজিটাল মার্কেটিং এর অসুবিধাগুলো কি কি

ডিজিটাল মার্কেটিং এর অসুবিধাগুলো কি কি? ডিজিটাল মার্কেটিং সমস্যা কোথায়?

ডিজিটাল মার্কেটিং বর্তমানে হইচই ফেলে দেওয়ার মতো একটা ইন্ডাস্ট্রি। ব্যবসা বাণিজ্যে ডিজিটাল মার্কেটিং হয়ে উঠেছে সবার জন্য এখন আশীর্বাদ- বিশেষ করে খুদ্র ও মাঝারি মাপের ব্যবসার জন্য। ইন্টারনেট মার্কেটিং এর গুরুত্ব আসলে বলে শেষ করার মতো নয়। এতো সুবিধার পরও ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের কি আসলেই কোন সমস্যা নেই? যদি থেকে থাকে তাহলে ডিজিটাল মার্কেটিং এর অসুবিধাগুলো কি কি? 

আজকের লেখায় আমি তুলে ধরবো ডিজিটাল মার্কেটিং এর নেতিবাচক দিকগুলো কি কি? 

ডিজিটাল মার্কেটিং এর অসুবিধাগুলো কি কি? 

ডিজিটাল মার্কেটিং হচ্ছে ডিজিটাল টেকনোলজি ব্যবহার করে কোন প্রতিষ্ঠানের পণ্য বা সেবার মার্কেটিং করা। যেহেতু এটা টেকনোলজি নির্ভর মার্কেটিং প্রসেস, তাই অন্য সব কিছুর মতো ডিজিটাল মার্কেটিং এরও কিছু সীমাবদ্ধতা বা অসুবিধা আছে। চলুন তাহলে দেখা যাক- ডিজিটাল মার্কেটিং সমস্যা কোথায়? 

১. দক্ষতা এবং ট্রেইনিং

ডিজিটাল মার্কেটিং কনসেপ্ট যেহেতু তুলনামুলকভাবে নতুন, তাই এখানে সর্বপ্রথম আপনাকে এই স্কিলটা ডেভেলপ করতে হবে। আপনি ডিজিটাল মার্কেটিং শিখে তখনই কাজ শুরু করতে পারেন। যেহেতু এটা ডিজিটাল টেকনোলজি নির্ভর মার্কেটিং, তাই এখানে ভাল করতে হলে আপনার ভাল টেকনিক্যাল নলেজ থাকা উচিত। 

যারা ডিজিটাল মার্কেটিং ভাল মতো জানে এমন মানুষকে দিয়েই করতে হবে ডিজিটাল মার্কেটিং ক্যাম্পেইন। কম জানা মানুষজন দিয়ে কাজ করলে হিতে বিপরীত হওয়ার আশঙ্কা আছে। 

এর জন্য আপনি ভাল কোন প্রতিষ্ঠানের থেকে ডিজিটাল মার্কেটিং কোর্স বা ট্রেইনিং করে নিতে পারেন। তবে মনে রাখতে হবে যার কাছে শিখবেন তিনি যেন হয়- ইন্ডাস্ট্রি এক্সপার্ট, যার ভাল ট্রাক রেকোর্ড আছে। কারণ বর্তমানে বেশিরভাগ ডিজিটাল মার্কেটিং শেখানো মানুষজন আসলে নিজে ডিজিটাল মার্কেটিং নিয়ে কাজ না করেও মানুষকে শেখাচ্ছে।

আপনি চাইলে ইউটিউব বা গুগল ঘেটেও শুরুটা করতে পারেন। তবে আপনার প্রচুর সময় দিতে হবে যদি নিজে নিজে শিখেন, কারণ আপনি একটা কোর্স বা ট্রেইনিং করলে সেখানে সবকিছু গোছানো পাবেন, আর নিজে নিজে শিখলে কোন কিছুই গোছানো থাকবে না। আপনাকে গুছিয়ে নিতে হবে। তাতে কোথা থেকে শুরু করবেন, কীভাবে শুরু করবেন এই বিষয়গুলো বুঝতে বুঝতে কিছুটা সময় লেগে যাবে।  

২. প্রতিযোগিতা

ডিজিটাল মার্কেটিং এ যেহেতু লোকেশন কোন ব্যাপার না, তাই পৃথিবীর ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্র এখন হয়ে গেছে ডিজিটাল ভিলেজ। মানে আপনি বাংলাদেশে বসে আমেরিকায় ব্যবসা করতে পারছেন, এটা একদিক থেকে যেমন খুবই ভাল কিন্তু এর বিপরীত দিকও আছে। একই লোকেশনে আগে আপনি একাই ছিলেন, কিন্তু এখন সেই লোকেশনে আপনার মতো অসংখ্য মানুষ ব্যবসা করছে অনলাইনে, যেহেতু এখন লোকেশন কোন বিষয় না। এর ফলে একটা ছোট এরিয়ার মধ্যেও এখন অনেক বেশি প্রতিযোগিতা। 

৩. সময় সাপেক্ষ

অনেক সময় ডিজিটাল মার্কেটিং বেশ সময় সাপেক্ষ হয়ে দাঁড়ায়। কখন? 

ডিজিটাল মার্কেটিং করার জন্য যদি কোন ভাল প্রফেশনাল না থাকে, বা আনাড়ি মানুষ যার ডিজিটাল মার্কেটিং নিয়ে খুব বেশি অভিজ্ঞতা নেই তাকে দিয়ে যদি ডিজিটাল মার্কেটিং ক্যাম্পেইন করেন তাহলে এই ক্যাম্পেইনে ভাল রেজাল্ট যেমন আসার সম্ভাবনা নেয়, তেমনি আপনার প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ সময় নষ্ট হবে।

যে কাজটি খুব কম সময়ের মধ্যে করা সম্ভব সেটা করতে অদক্ষ ডিজিটাল মার্কেটারের অনেক বেশি সময় লেগে যেতে পারে।  

৪. প্রযুক্তি নির্ভরশীলতা

ডিজিটাল ডিভাইস বা ডিজিটাল টেকনোজলি ব্যবহার করে কোন পণ্য বা সেবার প্রতি সাধারণ মানুষজনের আগ্রহ তৈরি করার প্রসেসকে বলে ডিজিটাল মার্কেটিং। তার মানে এখানে দুইটা জিনিস আছে-

১. ডিজিটাল ডিভাইস 

২. ডিজিটাল প্লাটফর্ম 

ডিজিটাল মার্কেটিং একটা টেক প্রধান মার্কেটিং। এর জন্য আপনাকে ইন্টারনেট ব্যবহারে দক্ষ হতে হবে, কম্পিউটারে দক্ষ হতে হবে, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম (ফেসবুক, ইউটিউব ইত্যাদি) ব্যবহারে দক্ষ হতে হবে। 

এখানে সম্পূর্ণটাই প্রযুক্তি নির্ভরতা। প্রযুক্তি সব সময় যে ভাল কিছু বয়ে আনে তা কিন্তু না, অনেক সময় প্রযুক্তির অতিরিক্ত ব্যবহার আপনার প্রতিষ্ঠানের মার্কেটিংকে সমস্যায় ফেলে দিতে পারে। 

৫. অভিযোগ ও প্রতিক্রিয়া

ডিজিটাল এই যুগে সব কিছু পাবলিক। যে কেউ চাইলে আপনার নামে এমন কিছু করে ছড়িয়ে দিতে পারে, যা আপনার নিজের জন্য বা প্রতিষ্ঠানের জন্য বিব্রিতকর এবং সমস্যা তৈরিকারক। এমন কি আপনার কোন কাস্টমার চাইলে আপনাকে অনেক বড় ক্ষতির মুখে ফেলতে পারে, আপনার প্রোডাক্ট বা সার্ভিস নিয়ে পাবলিকলি কোন রিভিও ছড়িয়ে দিয়ে। সেটা যদি কোনভাবে ভাইরাল হয়ে যায়, তাহলে এর মূল্য আপনাকে বহুগুণে দিতে হবে। 

নেগেটিভ ফিডব্যাক ম্যানেজ করাটা এখানে বেশ চ্যালেঞ্জিং কাজ। 

৬. নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা

ডিজিটাল টেকনলজির সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে আপনার তথ্যের নিরাপত্তা। ডিজিটাল মার্কেটিং যেহেতু ডাটা নির্ভর মার্কেটিং তাই এখানে আপনি কাজ করছেন লক্ষ লক্ষ মানুষের ডাটা নিয়ে, যার সঠিক ব্যবহার না করতে পারলে ডিজিটাল আইনে বা অন্য যে কোন লিগ্যাল জটিলতায় পড়তে পারেন। 

এমন কি আপনার নিজের ব্যবসার বা নিজের ব্যক্তিগত তথ্য যেকোন সময় অন্যের হাতে চলে যেতে পারে যদি আপনি পর্যাপ্ত নিরাপত্তা না রাখতে পারেন। আর এই কারণে আপনাকে বেশ বড় ক্ষতির সম্মুখীন হলে হতে পারে। 

৭. ধরা ছোঁয়ার বাইরে

পৃথিবীতে এখনো এমন অনেক মানুষ আছে যারা ইন্টারনেট ব্যবহারের আওতায় আসে নাই। এমন কি বাংলাদেশের এমন অসংখ্য মানুষ আছে যারা ইন্টারনেট ব্যবহার করছে না, ডিজিটাল ডিভাইস তাদের হাতে নেই। 

আপনি কতটুকু পর্যন্ত পৌঁছাতে পারবেন ডিজিটাল মার্কেটিং এ? সর্বোচ্চ যাদের হাতে ইন্টারনেট আছে সেই পর্যন্ত। এবার একটু ভেবে দেখেন, আপনার আশেপাশে বা গ্রামে এখন কি পরিমাণ মানুষ আছে যাদের হাতে ইন্টারনেট নেই। এই মানুষগুলোকে কোনদিন আপনি কাস্টমার বানাতে পারবেন না ডিজিটাল মার্কেটিং এ। ফলে অনেক ভাল সুযোগ মিস করছেন আপনি। 

ডিজিটাল মার্কেটিং এর সমস্যার সমাধান কীভাবে করবেন?  

সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়েই পৃথিবী। আমাদের কাজ হচ্ছে সমস্যাকে কত সুন্দরভাবে মোকাবেলা করে তাকে সুযোগে পরিণত করা। সত্যি বলতে ডিজিটাল মার্কেটিং এই অসুবিধার চেয়ে সুবিধা হাজারগুন বেশি। 

আগামী হচ্ছে ডিজিটাল মার্কেটিং এর। আপনি যদি সেই পুরনো ধ্যান ধারণা নিয়ে বসে থাকেন, তাহলে আপনি সত্যিকার অর্থেই অনেক অনেক সুযোগ থেকে পিছিয়ে পড়বেন। 

সুতরাং ডিজিটাল এই আশীর্বাদকে যতটা সম্ভব উজার করে গ্রহণ করুন। ডিজিটাল মার্কেটিং সমস্যা থাকলে তা ওভারকাম করার চেষ্টা করুন। চেষ্টা করুন টেক স্যাভি হতে, দক্ষতা অর্জন করতে। তাহলেই এগিয়ে যাবেন।  

শেষকথা

সবশেষ কথা এটাই যে ডিজিটাল মার্কেটিং এর অসুবিধা যাই থাকুক না কেন ভবিষ্যৎ মানেই ডিজিটাল মার্কেটিং। সমস্যাকে আকড়ে না থেকে ডিজিটাল মার্কেটিং এর সম্ভাবনা এবং সুবিধা নিয়ে ভাবুন। যা আপনাকে কি পরিমাণ সুবিধা দিতে পারে আপনি হয়ত কল্পনাও করতে পারবেন না। লেখাটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। ভাল থাকুন। 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top